নেপোলিয়ন হিল (১৮৮৩-১৯৭০) একজন আমেরিকান লেখক ও সাংবাদিক। তিনি মূলত ব্যক্তিগত উন্নয়নের দর্শন নিয়ে লিখিত তাঁর ‘থিঙ্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ বইটির জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত। তিনি ১৯৩১ সাল থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট-এর উপদেষ্টা ছিলেন।
১৯৩০ এর মার্কিন অর্থনৈতিক মন্দার প্রেক্ষাপটে নেপোলিয়ন হিল ‘থিঙ্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ বইটি লিখেছেন। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত এই বইটি ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী বইটির দশ কোটি কপি বিক্রি হয়েছে। একে সর্বকালের সেরা দশটি বইয়ের মধ্যে অন্যতম হিসেবে ধরা হয়।
ধনীরা কী করে ধন-সম্পদ অর্জন করে তা জানার জন্য লেখক পঁচিশ বছর ধরে গবেষণা করেন। গবেষণাকালে তিনি পঁচিশ হাজার মানুষের জীবন বিশ্লেষণ করেন। এই গবেষণালব্ধ জ্ঞান ব্যবহার করেই লেখক ‘থিঙ্ক অ্যান্ড গ্রো রিচ’ বইটি লিখেছেন। এই বইয়ে ধন-সম্পদ উপার্জনের সেই গোপন সূত্রাবলি বর্ণনা করা হয়েছে, যেগুলো ব্যবহার করে লাখো নারী-পুরুষ ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন। নেপোলিয়ন হিল-এর মতে, এই বইয়ে বর্ণিত পদ্ধতি যারা একবার আয়ত্ব করেন এবং প্রয়োগ করেন, তারা খুব অল্প চেষ্টাতেই ক্রমাগতভাবে সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন। তারা কখনো পুনরায় ব্যর্থতায় পড়েন না।
শিরোনাম দেখে পাঠক বইটিকে শুধুমাত্র ধনী হওয়ার পদ্ধতি (ফর্মুলা) হিসেবে চিন্তা করলেও নেপোলিয়ন হিলের ভাষ্যমতে, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে যে কোনো মানুষ যে কোনো কাজে সাফল্য পেতে পারে।
নেপোলিয়ন হিল মনে করেন, ব্যক্তিগত সাফল্য অর্জন পুরোপুরিভাবে নির্ভর করে ব্যক্তির আকাঙ্ক্ষা, দৃঢ় সিদ্ধান্ত ও প্রস্তুতির ওপর। তিনি বর্তমান বইয়ে সাফল্য অর্জনের জন্য তেরোটি সূত্র এবং ব্যর্থতার কারণরূপে ত্রিশটি কারণ তুলে ধরেছেন। সাফল্য অর্জনের জন্য তেরোটি সূত্র হচ্ছে:
১. আকাঙ্ক্ষা;
২. আস্থা;
৩. স্ব-পরামর্শ;
৪. বিশেষায়িত জ্ঞান;
৫. কল্পনা;
৬. সংগঠিত পরিকল্পনা;
৭. সিদ্ধান্ত;
৮. অধ্যবসায়;
৯. ঐক্যমন দলের ক্ষমতা;
১০. যৌনশক্তি রূপান্তরের রহস্য;
১১. অবচেতন মন;
১২. মস্তিষ্ক; এবং
১৩. ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়।
ব্যর্থতার কারণরূপে নেপোলিয়ন হিল ত্রিশটি কারণ তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে অন্যতম হলো:
১. প্রতিকূল জন্মগত অবস্থা;
২. জীবনে একটি উত্তমভাবে বর্ণিত উদ্দেশ্যের অভাব;
৩. মধ্যম অবস্থার উপরে লক্ষ্য নিতে উচ্চাশার অভাব;
৪. অপর্যাপ্ত শিক্ষা;
৫. আত্ম-শৃঙ্খলার অভাব;
৬. অসুস্থ স্বাস্থ্য;
৭. প্রতিকূল পরিবেশের প্রভাবগুলোর মধ্য দিয়ে চলাকালীন শৈশবকাল;
৮. দীর্ঘসূত্রিতা;
৯. অধ্যবসায়ের অভাব; এবং
১০. নেতিবাচক ব্যক্তিত্ব।
লেখক বইতে ছয়টি প্রধান ভীতি তুলে ধরেছেন, যেগুলোর সাথে সব মানুষই পরিচিত, হয়তো কিছুটা আগে কিংবা পরে। এগুলো হলো: ১. দারিদ্র্য ভীতি;
২. সমালোচনার ভীতি;
৩. অসুস্থতা ভীতি;
৪. ভালোবাসার কাউকে হারানোর ভীতি;
৫. বার্ধক্য ভীতি; এবং
৬. মৃত্যু ভীতি। লেখক মনে করেন, যাঁরা এই ছয়টি ভীতি থেকে মুক্ত, তাঁরা সৌভাগ্যবান।
মানুষ যাতে নিজেকে চিনতে পারে সেজন্য নেপোলিয়ন হিল বর্তমান বইয়ে আত্মবিশ্লেষণ পরীক্ষার জন্য কিছু প্রশ্ন তুলে ধরেছেন। মানুষ সচরাচর যেসব অজুহাত তুলে ধরে তার একটি তালিকাও তিনি বইতে উল্লেখ করেছেন।
লেখক মনে করেন, এই বইটি পড়ার মাধ্যমে আপনি এমন এক চাবিকাঠির অধিকারী হবেন, যা আপনার জীবনে সব ধন-সম্পদ অর্জনের দরজা খুলে দেবে। তবে প্রথমবার বইটির মমার্থ অনুবাধন করতে সক্ষম না হলে বইটি দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বার পড়া যেতে পারে। লেখক মনে করেন, ব্যক্তিগত ধন-সম্পদ অভ দঅর্জন কিংবা অন্য কোনো সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে বইটি নিশ্চিতভাবেই পাঠকের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
Reviews
There are no reviews yet.